স্পোর্টস ডেস্ক: বাংলাদেশের সাথে প্রথম খেলায় খাবি খেয়েছে। মাত্র ১৫৬ রানে অলআউট হয়ে হেরেছে ৬ উইকেটে। শুরুর সেই ধাক্কা সামলে ওঠে গতকাল দিল্লীর অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডকে ৬৯ রানে হারিয়ে হৈ চৈ ফেলে দিলো আফগানিস্তান।
আর উল্টো দিকে উড়ন্ত সূচনার পর আকাশে ওড়ার বদলে দিনকে দিন নিচের দিকে নামছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের সাথে দ্বিতীয় খেলায় রানবন্যায় ভেসে যাবার পর শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চরম নাস্তানাবুদ সাকিব আল হাসানের দল।
সামনে ভারতের সাথে খেলা। রোহিত শর্মার দল আছে দুর্দান্ত ফর্মে। ভারতীয় অধিনায়ক রোহিতের ব্যাট যেন খোলা তরবারি। প্রতিপক্ষ বোলারদের শাসন করছে। সঙ্গে নির্ভরতার প্রতীক বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল, শ্রেয়াস আয়ারের মত হাই কোয়ালিটি ব্যাটার আর জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজের মত ভয়ঙ্কর ফাস্টবোলার এবং রবীন্দ্র জাদেজা ও কুলদীপ যাদবের সাঁড়াশি স্পিন বোলিং।
ভারত এখন পুরো আসরের সবচেয়ে সমৃদ্ধ, শক্তিশালী, কঠিনতম প্রতিপক্ষ। সেই দলের সাথে তাদের মাটিতে খেলা। কঠিন চ্যালেঞ্জ টিম বাংলাদেশের। টাইগাররা কি পারবে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে জয়ের পথ খুঁজে নিতে?
অনেকেরই মত, আফগানদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারে টাইগাররা। আফগানরা দেখিয়েছে, নিজেদের শক্তি ও সামর্থ্যর আলোকে দল সাজিয়েই ম্যাচ জেতা যায়। ইংল্যান্ডের মত দলকেও হারানো সম্ভব।
আফগানরা ফজলহক ফারুকি আর নাভিন উল হক- দুজন মাত্র পেসার আর তিন স্পিনার মুজিব উর রহমান, রশিদ খান আর মোহাম্মদ নবির সাজানো বোলিং দিয়েই ইংল্যান্ডকে ২১৫ রানে বেঁধে ফেলে ম্যাচ জিতেছে। আগে ব্যাট করে তুলেছিল ২৮৪।
আফগানরা সেই নিজেদের চিরচেনা ফর্মূলায় হাটছে। একদিকে মিস্ট্রি অফস্পিনার মুুজিব উর রহমান আর অন্যদিকে ফজলহক ফারুকিকে দিয়ে বোলিং আক্রমণ শুরু করছে।
এক সময় বাংলাদেশও একদিকে পেস আর অন্যদিকে স্পিন দিয়ে শুরু করতো। মনে করে দেখুন তখনই দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তানসহ বড় শক্তির বিপক্ষে জয় এসেছে। আর এখন টাইগারদের ফর্মুলা হয়েছে ৩ পেসার দলে থাকতেই হবে। তাসকিন, মোস্তাফিজ আর শরিফুলকে খেলাতেই হবে।
বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা , ইংল্যান্ড কিংবা নিউজিল্যান্ডে হলে মানা যেতো। খেলাটা হচ্ছে ভারতে। সেখানে আফগানরা ২ পেসার আর ৩ স্পিনার নিয়ে জিততে পারলে আমরা পারবো না কেন?
এই বোধ থাকলেই জয়ের পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব। কিন্তু তা আর হচ্ছে কই? পেস বোলার ঠাসা একাদশ টাইগারদের। তিনজন ফাস্টবোলার থাকছেন। আর স্পিনার কমে দুইয়ে নামছে। গেম প্ল্যানিং আর টার্গেটটাই ভুল।
ভারত, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার মত বলেকয়ে ৩০০+ রান করার সামর্থ্য নেই আমাদের। সেই টার্গেট না নিয়ে আমরা আমাদের স্টাইলে ব্যাটিং করে ২৮০+ স্কোর গড়বো। তারপর স্পিন নির্ভর বোলিং দিয়ে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরার প্রাণপন চেষ্টা করবো। তা না করে হঠাৎ পেসকেন্দ্রিক বোলিং সাজিয়ে ‘জাতে’ ওঠার ভূত চেপেছে মাথায়। এই ভূতটাই সর্বনাশ ডেকে আনছে।
ভারতের মাটিতে ফাস্টবোলিং দিয়ে ম্যাচ জয়ের চিন্তাটাই ‘বুমেরাং’ হচ্ছে বারবার। অথচ একটু চোখ কান খোলা রেখে কৌশল আটলেই ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার পথ পাওয়া যেতে পারে।
শ্রীলঙ্কার মাটিতে এশিয়া কাপে ২৬০+ করে ভারতকে হারিয়েছে টাইগাররা। বিশ্বকাপের আগে গা গরমের ম্যাচে অধিনায়ক সাকিবকে ছাড়া ৩ স্পিনার (মেহেদি মিরাজ, শেখ মেহেদি ও নাসুম আহমেদ) নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ২৬৩ রানে অলআউট করে ৭ উইকেটে জিতেছে।
কিন্তু বিশ্বকাপে গিয়েই টাইগারদের মনে হচ্ছে, আমাদের অন্য ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে হবে। ৩০০ + বা সাড়ে তিনশো করতে হবে। এতে করে কোনোটাই হচ্ছে না। উল্টো মাঠ ছাড়তে হচ্ছে হার নিয়ে। তাই জেতার কথা ভাবতে হলে আদি মানে ৩ স্পিনার ফর্মুলায় ফিরে যেতেই হবে। তাহলেই কেবল সেই বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব।